
ফরিদপুরে শ্রমিক পিটিয়ে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা
ফরিদপুরে দুই ভাইকে মেরে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হয়
মুল ঘটনাঃ ১৮ এপ্রিল রাত ৭টার দিকে ফরিদপুর এর মধুখালী উপজেলাতে ডুমাইন এর পঞ্চপল্লির কালি মন্দিরে আগুন দেয়ার সন্দেহে গুজব ছড়ানো হয়। এরপর বাঁশ, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে আপন দুই সহোদর কে হত্যা এবং আরও পাঁচজনকে গুরুতর আহতের ঘটনা ঘটে।
একনজরেঃ
- কালী মন্দিরে আগুনের অকারেন্স করেছে বিনয় সাহা।
- অজিত কুমারের নির্দেশে এই পুরো নাটক হয়।
- মেম্বার অজিত কুমার চাঁদাবাজির জন্য এটা করল।
- মব জড়ো করিয়েছে এই অজিত কুমারই।
- অজিত কুমারের লোকেরা আগেই হুমকি দিয়েছিল।
- তার ডাকে সায় দিয়েছে চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান।
নিহত দুই শ্রমিক হলেন মো. আশরাফুল (২০) ও তাঁর ভাই মো. এরশাদুল (২১)। ৭ মুসলিম শ্রমিককে নৃসংশভাবে হাত-পা বেঁধে পেটানো হয় এবং ৫ জন গুরুতর আহত হয়।
সেদিনের ঘটনাঃ মধুখালীর ইউএনও মামনুন আহমেদ অনীক এবং ওসি মিরাজ হোসেন হতাহতদের উদ্ধার করতে পুলিশসহ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও জিম্মি করে হামলকারীরা। পরে ফরিদপুর এর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঈবং ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় উদ্ধার করে। হামলাকারীরা পুলিশকেও হামলা করে, নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৭৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পুলিশ। এ ঘটনার পরে মন্দিরে আগুন, নির্মাণ শ্রমিক হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে স্থানীয় থানায়।
গ্রেফতারের ঘটনাঃ ২৩ এপ্রিল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলাতে মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরাঃ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দী উপজেলা বিশ্বেশ্বের, উজ্জ্বল কুমার মিত্র (৩৩), একই উপজেলার পুষআমলা গ্রাম এর বিশ্বজিৎ মল্লিক (৫২), সাধুখালী এলাকা এর কনক বিশ্বাস (২৭), ফরিদপুর এর মধুখালী উপজেলা এর জিনিস নগর এলাকার ছেলে তপন কুমার মণ্ডল (৪০), একই উপজেলার তারাপুর এলাকার অনুপ রায় (৩১), একই গ্রামের টুটুল চন্দ্র মণ্ডল (৩০), মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার মদনপুর এলাকার প্রসেনজিৎ সরকার (২০) ও একই উপজেলার বড়ালীদহ এলাকার সুজয় বিশ্বাস (১৬)।
২০ এপ্রিল ধর্মমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি নিহতদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেন এবং নিহত দুই ভাইয়ের পরিবারকে ২ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এবং পঞ্চপল্লীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ২১ এপ্রিল ঘটনাস্থলে যান পুলিশ এর ঢাকা রেঞ্জ এর ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
রাজনীতিঃ ২৬শে এপ্রিল যৌথভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
- লোকমান হোসেন জাফরী বলেন, ‘আমরা শুনেছি, আগুন দেওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসী প্রথমে ওদের (শ্রমিক) সন্দেহ করে স্কুলের একটা কক্ষে আটকে রাখেন। কিন্তু তাঁরা মারধর করেননি। ইউপি চেয়ারম্যান এসে তাঁদের মারধর শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য।’
- মো. আমজাদ হোসাইন বলেন, ‘ঘটনার পর ডিসি সাহেব আমাদের ডেকেছিলেন। সেই সভায় ধর্মমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। আমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, দুই দিনের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে; কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।’
- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এই ঘটনাটি অবশ্যই পরিকল্পিত।
- মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বেনারকে বলেন, “বুধবার পর্যন্ত পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরা সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী।”
তদন্ত কমিটি/বিএনপিঃ
ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিএনপি যা রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।