মেসাধারণ মে

রাফসান ইস্যুর আদ্যোপান্ত! নানানজনের নানা মতোবাদ একসাথে

কে কে ছিলেন খাদ্যবালক রাফসানের পক্ষে? তা নিয়ে আজকের আয়োজন

বিজ্ঞাপন
ফেসবুকে সাধারণত কোনো ইশু তিনদিন যাবৎ তাজা থাকে। এরই মধ্যে বিপ্লব পালটা-বিপ্লব ঘটে, নায়ক হয়ে যায় খলনায়ক, খলনায়ক নায়ক। কোনো-কোনো ইশু পাঁচদিনও স্থায়ী হয়। এ-ক্ষেত্রে দেখা যায় করোনার মতো ফার্স্ট ওয়েভ থেকে ফোর্থ-ফিফথ-সিক্সথ ওয়েভ। ফার্স্ট ওয়েভে নির্দিষ্ট একজনকে খলনায়ক বানানো হয়, একজনকে নায়ক। সেকেন্ড ওয়েভে আবিষ্কৃত হয় আসলে খলনায়কই নায়ক, নায়ক খলনায়ক। থার্ড ওয়েভে প্রমাণিত হয়— নায়ককে যতটা খলনায়ক ভাবা হচ্ছে; সে আসলে অতটা খলনায়ক না, বর্ণনার চেয়ে একটু কম খলনায়ক, সে মূলত পরিস্থিতির শিকার, তাকে মারা উচিত না, মারলেও আস্তে মারা উচিত। চতুর্থ দিনে, ফোর্থ ওয়েভে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়— নায়ক-খলনায়কের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত প্রায় সমান-সমান দাঁড়ায়, এই একান্ন-ঊনপঞ্চাশ। ফিফথ ওয়েভ বা সিক্সথ ওয়েভ সম্পর্কে পরে বলব।
আলোচিত খাদ্যবালক ইফতেখার রাফসান বাবা-মাকে একটি দামি উপহার দেওয়ার পর কোনো এক চিকিৎসক নাকি বিষোদগার করেছিলেন এই মর্মে যে, তিনি সারাজীবন পড়ালেখা করেও গাড়ির মুখ দেখেননি, পক্ষান্তরে রাফসান খেয়ে-খেয়েই গাড়ির মালিক হয়ে গিয়েছেন। কোন চিকিৎসক এই পোস্ট দিয়েছিলেন, হদিস পাইনি। তবে, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পোস্ট দেখেছি হাজারে-বিজারে। এ রকম প্রায়ই হয়; বিরোধিতা কে করেছিল, কেউ জানে না; কিন্তু বিরোধিতাকারীর পিন্ডি চটকানো অযুত-নিযুত পোস্ট দেখা যায় (দেশে গণধোলাইয়ে প্রাণহানির পরিমাণ কেন এত বেশি, তা এ থেকেই বোঝা যায়)। ফার্স্ট ওয়েভে সবাই ছিল রাফসানের পক্ষে। একদিনের মধ্যে রাফসান হয়ে উঠেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ কুড়ি-পঁচিশজন বাঙালির একজন। সেকেন্ড ওয়েভে আবিষ্কৃত হলো রাফসানের বাবা ঋণখেলাপি। লোকে বলাবলি করতে লাগল— রাফসান বাবা-মাকে গাড়ি কিনে না দিয়ে তাদের খেলাপি ঋণ শোধ করতে পারতেন।
সেকেন্ড ওয়েভের শেষদিকে যারা রাফসানকে দেবদূত বানিয়েছিল, থার্ড ওয়েভের শুরুতে তারাই তাকে ‘অডির পুত’ থেকে ‘নডির পুত’ বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
ফোর্থ ওয়েভে ভেসে বেড়াচ্ছে আইনি ব্যাখ্যা— রাফসানের বাজান ব্যক্তি হিশেবে ঋণখেলাপি না, তার প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি; পুরো প্রতিষ্ঠানের দায়ভার তার একার না, পিতার খেলাপি ঋণ শোধের দায়ও রাফসানের না। থার্ড ওয়েভের অব্যবহিত পরপর রাফসানকে বা তার ড্যাডিকে যতটা ক্রিমিনাল মনে হয়েছিল, এখন ততটা লাগছে না; কিছুটা হালকা লাগছে। পরিস্থিতি গতকালও রাফসানের প্রতিকূলে ছিল, এই মুহূর্তে অনুকূলে। ফেসবুক এখন ‘পিতার অপরাধে পুত্রকে দোষী করা যাবে না’ অবস্থানে আছে। ম্যাচে এখন টানটান উত্তেজনা। একশো আঠারোতম মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পে গোলবারে শট নিয়েছেন, কিন্তু এমিলিয়ানো মার্টিনেজ তা কীভাবে-কীভাবে যেন ঠেকিয়ে দিয়েছেন। ম্যাচ এখন যেকোনো দিকে ঘুরে যেতে পারে, গড়াতে পারে টাইব্রেকারেও।
ফিফথ ওয়েভে হাজির হবেন ভাসমান সমাজবিজ্ঞানীরা। কী ধরনের কালচারাল হেজিমনি ও সোশ্যাল ডিসকোর্স থেকে রাফসানদের আবির্ভাব ঘটে, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ও দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের নিরিখে সাবঅল্টার্ন রাফসানরা কতটা সাযুজ্যপূর্ণ, নব্য ঔপনিবেশবাদ ও পেটি বুর্জোয়াদের উত্থানে রাফসানদের কী কী ভূমিকা আছে, লাকা-দেরিদা-ফুকোদের ন্যারেটিভ গ্র্যান্ড-ন্যারেটিভ কাউন্টার-ন্যারেটিভ রাফসানদের দৌরাত্ম্যকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করে— ইত্যাদি দেখা যাবে ফিফথ ওয়েভে। এই ওয়েভটা খুব-একটা শক্তিশালী হবে না। এই ওয়েভে সবাই সারাদিন যে যার মতো মাস্কছাড়া ঘুরে বেড়াবে; শুধু সেইসব জায়গায় গিয়েই মাস্ক পরবে, মাস্ক না পরলে যেখানে ঢুকতে দেয় না।
সিক্সথ ওয়েভে আবির্ভূত হবে জেন-জি। এরা রাফসানকে নিয়ে মিম বানাবে, তার বাবা-মাকে নিয়ে অ্যানিমেশন বানাবে, মিম বানাবে ঐ চিকিৎসককে নিয়ে; কেউ-কেউ বলবে— ‘এদিকে রাফসানকে না-চেনা আমি’। কেউ বা বলবে— ‘রাফসানকে নিয়ে কোনো পোস্ট না দিলে সমাজ কি আমাকে মেনে নেবে’। নতুন-নতুন বামপন্থা-কপচানো কেউ-কেউ বলবে— ‘জনগণের দৃষ্টি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করতে নসরুল হামিদ বা ডিবি হারুনের মাধ্যমে সরকার রাফসানকে দিয়ে অডি-নাটক মঞ্চস্থ করছে।’ এই ওয়েভের একপর্যায়ে কোনো-কোনো স্বার্থান্বেষী সুযোগসন্ধানী শব্দব্যবসায়ী রাফসানের সাফাই পোস্টের অপেক্ষায় থাকবে। এরপর তার পেজে গিয়ে পোস্টের বাঙ্গি টিপে-টিপে আঠারোটা বানানভুল ধরে নিজের ই-বুক বিক্রি করবে। রাফসান ইশুর সেভেন্থ ওয়েভ আসবে না। কেননা এই ইশু অতটা শক্তিশালী না। তবে, ইশুটার সাথে কোনোভাবে একটা অল্পবয়স্ক সুদর্শন মেয়েকে জড়ানো গেলে বিশ-বাইশতম ওয়েভও আসত। আপাতত তা আর হচ্ছে না।

এ পর্যন্ত লিখেছেনঃআখতারুজ্জামান আজাদ

কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং আইন বিষয়ের ছাত্র মাসুম আপলোড দিয়েছেনঃ ”ঋণ খেলাপি” দের জন্যে জনগণ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নিয়ে ভিডিও।

Abdun Noor Tushar বলেন, There is a sharp difference between a Shameless statement and a bold statement.

ঋণের টাকা ইচ্ছা হলেই দিয়ে দিতে পারি – দেই না কারণ আমরা হিসাব জানি না – এটা একটা ডাহা মিথ্যা। আদালতে মামলায় নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয় পাওনা দাবী কতো। ঋণ পরিশোধের তাগাদাতেও বলতে হয়।
বুক ফুলিয়ে ডাহা মিথ্যা বলা একটা নির্লজ্জতা। এই নির্লজ্জতা দিয়ে যে ইনফ্লুয়েন্স বা প্রভাবিতকরণ হচ্ছে সেটির নাম কুপ্রভাব – Bad Inluence.
  • অনুষ্ঠানে দ্বৈত অর্থ আছে এমন শব্দ বা dual meaning দিয়ে কথা বলা হচ্ছে।
  • সুগার ড্যাডি নিয়ে গল্প হচ্ছে।
  • বই মেলাতে বই বাদ দিয়ে প্রেমিক জুটির পেছনে টেলিভিশন দৌড়াচ্ছে।
  • ত্রুটিপূর্ণ কার্টহুইল ডিগবাজি – নকল রোলেক্স ঘড়ি – আর পাছানৃত্য নাচছে তথাকথিত নায়ক।
  • লাস্ট ডিফেন্ডার্স অব ইতরামি বানাচ্ছে সবাই মিলে।
  • ভোঁতা দা দিয়ে মাইরালা কাইটালা গাওয়া হচ্ছে।
  • উপস্থাপক অতিথিকে বলছে অতিথি উপস্থাপককে বিয়ে করলেই পারতো। তারপর হ্যা হ্যা ফ্যা ফ্যা করে হাসছে।

এমন নির্লজ্জ বেহায়া বেশরম সময় আর দেখে নাই এই জাতি।অদৃশ্য সুতার কাপড় পরে নগ্ন হেঁটে চলেছে রাজা। আর সবাই দেখছে।

Joyen Uddin Sarker Tonmoy নামক ফেসবুক ব্যবহারকারী সকল শ্রেণির মানুষের কথা লিখেন একই পোস্টে। তিনি বলেন,

  • মারজুক: ঋণ যার, পিনিক তার— তুমি কোন হালা?
  • সরোয়ার: এইসব ইস্যু নিয়ে কথা বলে এলজিবিটি ইস্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
  • মোহাইমিন: আমি আগে থেকেই বলেছি ব্যাংকব্যবস্থা কীভাবে ফকির বানিয়ে ছেড়ে দেয়। যারা ঋণখেলাপী তারাই প্রকৃত মজলুম।
  • ইশরাক: শাহবাগী কম্যুনিটি ঋণখেলাপী কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী। ইস্ট পাকিস্তানের এ কি হাল!
  • আরেফিন: এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য যে জামায়াতে ইসলামী এই ইস্যু নিয়ে চুপচাপ, ওদের পেইজে একটা বিবৃতিও দেখলাম না।
  • চিন্তিত: ছোটভাই যে কট খাইলো সেই মজা লাগতেছে।
  • শক্তি: ছোটভাইকে দেখলাম ফ্রি মিক্সিং এডুকেশনে অভ্যস্ত। বেশিরভাগ অসচেতন বাবা, দুর্নীতিপরায়ণ বাবারাই সন্তানদের ফ্রিমিক্সিংয়ে অভ্যস্ত করে।
  • আদনান: ঋণখেলাপীর আদি উৎস হলো ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড। তাদের বৃত্ত থেকে বের না হয়ে আসলে লাইফের কোনো লেভেলেও শান্তি থাকবে না।
  • ত্বহা: ঋণখেলাপীদের উত্থান হলো কিয়ামতের লক্ষণ। শীঘ্রই দাজ্জাল আসবে, আর ঋণখেলাপীরা দাজ্জালের প্রতি ইমান আনবে।
  • রাইসু: ঋণ হলো ছোট ভাইয়ের বাপের, আব্দুল্লাহর বাপের না। যারা মাথা, তারই ব্যথা হওয়া কাম্য। ধন্যবাদ।
  • মুনজারিন: ঋণখেলাপী ইংরেজি হলো Loan Defaulter. আমরা যদি বলি, ‘ছোটভাইয়ের বাবা একজন ঋণখেলাপী’— ইংরেজিতে হবে Chotobahai’s father is a loan defaulter.
  • আমান: এই ইস্যুটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে থাকতে আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি বেনজিরের দণ্ড কিন্তু আর কাজ করে না, কিন্তু সেক্সটিং করেই যায়।
  • মনোয়ার: Je m’amuse à Paris.
  • পিনাকী: গিয়া দেখেন ঋণখেলাপীরা দিল্লির প্রোডাক্ট আর কাডাল রাণী তো আছেই বড় ভাই-ছোট ভাইদের দেখার জন্য।
  • মেঘমল্লার: পুঁজিবাদী সমাজ ব্যাবস্থার শোষণে আমরা নিষ্পেষিত। ঋণখেলাপীর মতো পুঁজিবাদীদের জন্য শ্রমজীবী শোষিতরা দিন দিন ধুঁকছে।
  • ওসামা: ছোট ভাইয়ের যদি দম থাকে তাইলে বহাসে আসেন, ময়দান ছেড়ে পালাবেন না।
  • রশিদ: রাফসান ঋণখেলাপীর পোলা তো কী হইছে? ভালো না লাগলে ভাগ। তোরে কেও দাওয়াত দেয় নাই ওর ভিডিও দেখার জন্য।

Nayel Rahman এর কমেন্ট বক্স থেকেঃ Sell hole CONTENT na hole PRIVACY মূলক মন্তব্য পাওয়া যায়। তিনি পোস্ট করেন, নিজের জীবনের খুঁটিনাটি সবকিছু পণ্যে পরিণত করার পর এখন ইউট্যুবার/ইনফ্লুয়েন্সার আর তাদের ফ্যানদের ‘প্রাইভেসি’, ‘পারিবারিক/ব্যক্তিগত ব্যাপার’ নিয়ে কনসার্ন দেখে ভালো লাগতেছে।

বিভিন্ন পীরদের কে কে রাফসানের পাশে ছিলো? চলুন জেনে নেই।

বউ ব্যবসায়ী খ্যাত আতিক ভাইঃ

অছাত্রদের পীর আনাস ভাইঃ

আধ্যাতিক জগতের গুরু ইয়াহিয়া আমিনঃ
নতুন ভাবী (সুনেহরা);
সালমান মুক্তাদির (পল্টি পরবর্তী স্ক্রিনশট)ঃ

এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের চালানো অভিযানে এপ্রিল এর একটি পোস্ট থেকে জানা যায়ঃ

কোন রকম আধুনিক অটোম্যাটিক মেশিন ছাড়াই কোন রকম অনুমোদন না নিয়ে ও
অপেশাদার লোকবল ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে জনাব রাফসান দ্যা ছোট ভাই এর ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস BLU তৈরি করা হচ্ছিল কুমিল্লার একটি কারখানায়।
উক্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুমিল্লা এর বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার জনাব ফারহানা নাসরিন এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।
প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএসটিআই, কুমিল্লা অফিসের কর্মকর্তা জনাব আরিফ উদ্দিন প্রিয়, পরিদর্শক (মেট্রোলজি) এবং সার্বিক সহযোগিতা করেন জনাব ইকবাল আহাম্মদ, ফিল্ড অফিসার (সিএম)।

আরো দেখুন

রিলেটেড আর্টিকেল

Leave a Reply

Back to top button