জুনভাইরাল জুন

সাদিক এগ্রো এর সহপ্রতিষ্ঠাতার একাধিক মিথ্যাচার

বিজ্ঞাপন

সাদিক এ্যাগ্রোর সহপ্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইমরান হোসেন কী পরিমাণ মিথ্যুক এটা গণমাধ্যমে দেয়া তার বক্তব্যসমূহ শুনলেই বোঝা যায়! কারণ, মিথ্যুকদের বক্তব্য কখনোই এক থাকে না! এরা একেক সময় একেক রকম কথা বলেন!

শুরুতে তিনি গরুর বংশপরিচয় বলে বেশ ভালোভাবে ভাইরাল হোন! তখনও তারে নিয়ে মানুষ সেইভাবে কোনোকিছু বলেন নাই! অনলাইনে সামান্য ট্রোলের মধ্যেই ব্যাপারটা সীমাবদ্ধ ছিলো! কিন্তু তার একেক রকম অসঙ্গতিপূর্ণ কাজকর্ম দেখে মানুষ এখন টুকটাক কথা বলছেন!
তিনি বলেন— গরুর দাম এক থেকে দেড় কোটি কারণ, এই গরুর ১১০ বছরের পেডেগ্রি আছে! গরুর বাপ, দাদা এবং পরদাদারা ছিলো ব্লাড লাইন চ্যাম্পিয়নের নোবেল সিরিজের গরু! এই গরুর দাঁড়ানোর স্টাইলও ভিন্ন! যার ফলে এটার দাম এক থেকে দেড় কোটি!
মজার বিষয় এসব উচ্চবংশীয় গরু-ছাগল বিক্রিও হচ্ছে! সম্ভবত এবার তিনি ৩ টা গরু আড়াই কোটিতে বিক্রি করছেন! ১৫ লাখের ছাগল কাণ্ডে অবশ্য তিনি এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন! মানে এই গরুগুলোর ক্রেতা কে বা কারা তিনি তা জানাচ্ছেন না!
… আরটিভির এক সাংবাদিক যখন তাকে প্রশ্ন করেন এক কোটির গরুটার ক্রেতা কে? তখন ইমরান হোসেন জানান, গরুটা আসলে এক কোটিতে বিক্রি হয়নি! সামান্য কিছু কমে বিক্রি হয়েছে! আর গরুটা এবারের কুরবানি ঈদে ডেলিভারিতে যাবে না! আগামী কুরবানির ঈদে যখন ডেলিভারিতে যাবে তখন ক্রেতার নাম জানা যাবে! ব্যাপারটা তো ছোটোখাটো কোনো বিষয় না! অনেক বড় ব্যাপার! অবশ্যই আপনারা জানবেন!
মানে কী রকম ডিপ্লোম্যাটিক কথাবার্তা শুধু ভাবেন! গরু নাকি ডেলিভারি হবে আগামী কুরবানির ঈদে!!
আসলে ব্যাপারটা খুব সহজ! যখন দেখা গেলো ১৫ লাখের ছাগল কাণ্ডে এক দুর্নীতিবাজ বাবার নাড়ীনক্ষত্র সব ফাঁস হয়ে গেলো তখনই ইমরান হোসেন তার প্ল্যান পরিবর্তন করলেন! এবং গণমাধ্যমে আলাপ দিলেন গরুটা এবারের ঈদে কুরবানি হবে না! উনি সম্ভবত বর্তমান যুগের অনলাইন ব্যবহারকারীদের ভোদাই ভাবেন!
হাজার হাজার ইস্যুর ভীড়ে মানুষ দুইদিন আগের ইস্যুই মনে রাখতে পারেন না! আর তিনি দিচ্ছেন আগামী বছরের কুরবানির আলাপ!
… ১৫ লাখের ছাগল ইস্যুতেও তিনি একেক সময় একেক মিথ্যাচার করছেন! ছাগলটি বিক্রির সময় তিনি ইফাতকে পরিচয় করিয়ে দেন ছোটো ভাই হিসেবে! অথচ ব্যাপারটা নিয়ে জোরেশোরে সমালোচনা শুরু হলে তিনি বলেন, ইফাতকে আমি চিনি না! তার কোনো কন্ট্যাক্ট নম্বরও আমার কাছে নাই! হাজার হাজার কাস্টমারের মতোই ইফাতও আমার একজন কাস্টমার! তার বংশপরিচয় সম্পর্কে আমি অবগত না!
অন্যদিকে ইফাত বলছেন ইমরান হোসেন তার পূর্বপরিচিত বড় ভাই! শুধু বড় ভাই’ই না; নানানরকম পশুপাখির ইভেন্টে ইমরান হোসেনকে চীফ গেস্ট হিসেবে রাখতেন!
যদি ধরেও নিই ইমরান হোসেন ইফাতকে চেনেন না! কিন্তু ১৮/১৯ বছরের একটা ছেলে পরপর দুই বছর ধরে তার থেকে গরু-ছাগল ক্রয় করছেন প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি; ইমরান হোসেনের কি একটাবারও মনে হয়নি যে, এই অল্প বয়সী ছেলেটা আসলে কে? অত টাকা দিয়ে সে ঠিক কীভাবে গরু-ছাগল ক্রয় করছে??
মোহাম্মদ ইমরান হোসেন, আপনি যে একটা মিথ্যুক এটা বোঝার জন্য অত পড়াশোনার দরকার লাগে না! আপনি নিজেই প্রমাণ রেখে যাচ্ছেন প্রায় প্রতিটি কথায়!
… দুইদিন আগে জানালেন শুধুমাত্র ছাগলের জন্যই এক লাখ টাকা বুকিং মানি দিয়েছিলো! কিন্তু আজকে আবার দেখলাম গরুর জন্যও বুকিং মানি ছিলো! ছাগল আর গরু মিলিয়ে বুকিং মানি সম্ভবত ১১ লাখ টাকার! সেই টাকাটাও নাকি এখন আর ইফাত নিতে চাচ্ছে না!
কিছুদিন আগে আরেক সাংবাদিক তার ফার্মের গরু নিয়ে তারে প্রশ্ন করছিলো— আপনার বংশপরিচয় দেয়া গরু আর আপনার ফার্মে রাখা গরুর মধ্যে তো কোনো মিল নাই! দুইটা দুই রঙ এর!
তখন ইমরান হোসেন বলছিলেন— আসলে ওয়েদারের জন্য গরুর গায়ের রঙ পরিবর্তন হয়! এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার! মানে কালো রঙ এর একটা গরু ওয়েদারের জন্য পিঙ্ক কালারেরও হতে পারে! এটা স্বাভাবিক!
আমার ধারণা, ইমরান হোসেন বিভিন্ন খামার থেকে কুরবানির ২০/২৫ দিন আগে থেকেই পছন্দ মতো গরু সংগ্রহ করেন! তারপর সেইসব গরুর পুটকিতে সিল ছাপ্পর দিয়ে উচ্চবংশীয় গরুর আলাপ দেন! আপনি যখন তার তথ্যসূত্র নিয়ে অনলাইনে সার্চ দিবেন, দেখবেন তার দেয়া তথ্যনুযায়ী গরু আসলেই আছে!
… কিন্তু আপনার কি মনে হয় এসব যাচাই-বাছাই করার দরকার পড়ে দুর্নীতিবাজদের? তাদের দরকার কালো টাকা সাদা করার! ব্যস!
এক ছাগল কাণ্ডেই অনুমান করা যায় ইমরান হোসেনের ক্রেতা মূলত কারা! কারা আসলে এক কোটি, দেড় কোটি, ৯০ লাখ, ৭৫ লাখ আর ১২ লাখে গরু-ছাগল ক্রয় করেন!
আরটিভির সাংবাদিক যখন ইমরান হোসেনকে এটাও বলেন যে, আচ্ছা দুর্নীতি দমন আর এনবিআর থেকে যদি কোনো তদন্ত হয় আপনি কি তাদের সহযোগিতা করবেন?
তখন ইমরান হোসেন স্ট্রেইট বলেন— কেনো তারা তদন্ত করবেন?? তারপর তিনি সাংবাদিকরে পাল্টা প্রশ্ন করেন— দেশে ৫/১০ কোটির গাড়ি চলে রাস্তায়! এক সন্ধ্যায় ৩/৪ লাখ টাকার মদ খান কেউ কেউ! আমরা এসব দেখি! কই, তখন কি তদন্ত হয়?? একটা গরু এক থেকে দেড় কোটিতে বিক্রি হলেই তদন্ত করতে হবে??
… তিনি আরো বলেন— মানুষ কুরবানি দেয় আল্লাহ্’র রাহে! একজন সখ করে এক কোটির গরু কিনতেই পারে! এটা নিয়ে অত সমালোচনা কেনো হবে?
সাংবাদিক যখন বলেন— বাংলাদেশে তো ব্রাহমা গরু আমদানি করা নিষিদ্ধ! আপনি কীভাবে আমদানি করেন? তখন ইমরান হোসেন বলেন— কে বলছে নিষিদ্ধ? আপনার আসলে জানাশোনা নাই! ব্রাহমা যে নিষিদ্ধ এটার কোনো গেজেট হয়ছে?
তাহলে ২০২১ সালে ১৮ টি ব্রাহমা গরু বাংলাদেশ বিমান বন্দরে আটক হয়ছিলো কোন আইনে? সেই গরুগুলো তো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আন্ডারে ছিলো! সেই গরুগুলো এখন কোথায়??
জ্বি ইমরান হোসেন আপনিই ঠিক! মানুষ এক কোটির গরু না কিনলে আপনি কীভাবে ৪৫ হাজার দিয়ে একটা উচ্চবংশীয় ইলিশ কিনবেন??
… ইমরান হোসেন মূলত সাধারণ মানুষ এবং সাধারণ খামারিদের কল্যাণে কাজ করেন না! এটা উনি নিজেও বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে বলছেন! উনি বিশেষ বিশেষ মানুষের কল্যাণে কাজ করেন! যা ইতিমধ্যেই ছাগল কাণ্ডে প্রমাণিত! অথচ এই লোক বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি!!
যাকগে, ইমরান হোসেনের পেডেগ্রি টুকটাক জানলাম! সত্য বলতে উনি সোনার চামচ মুখে দিয়েই জন্মগ্রহণ করছেন! উনার জন্ম ঢাকায়! আদিনিবাস সিলেট! উনার বাবার নাম হাজ্বি ওসমান আলী! যিনি জালালাবাদ স্টিল, জালালাবাদ বিল্ডিং, জালালাবাদ মেটাল, জালালাবাদ রঙিন টিনের কর্ণধার!
২০০০ সালে ইমরান হোসেন ছাত্রাবস্থায় পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন! এবং ২০০০ সালেই তিনি হেমায়েতপুর রঙিন টিনের ফ্যাক্টরির পেছনে ছোট্ট একটি খামার দেন! যেটার উদ্দেশ্য ছিলো পারিবারিক এবং আত্মীয়স্বজনের মাঝে ভালো মানের মাংস এবং দুধ সরবরাহ করা!
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে তিনি তার বাল্যবন্ধু তৌহিদুল আলমকে নিয়ে ‘সাদিক এ্যাগ্রোর’ জন্ম দেন! বলে রাখা ভালো সাদিক একটি আরবি শব্দ! যার বহুল প্রচলিত অর্থ বন্ধু!
সাদিক এ্যাগ্রোর বেশকিছু সিস্টার কনসার্ন্স আছে! যারমধ্যে শাহী মিঠাই, শাহী বেকারি এবং শাহী খানা অন্যতম! ব্যক্তি জীবনে ইমরান হোসেন তিন সন্তানের জনক! সম্ভবত বড় সন্তান ইমানানও তার সাথে খামার দেখভাল করেন!
… সাদিক এ্যাগ্রোর মোহাম্মদ ইমরান হোসেনের সাথে এদেশের সাধারণ মানুষের কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নাই! শুধুমাত্র তার এ্যাগ্রো বিজনেসের অসঙ্গতির জন্যই মানুষ আজ কথা বলছেন! সেসব কথায় বেশ যুক্তিও আছে! সমসাময়িক আলোচনা সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইমরান হোসেন ভবিষ্যতে প্রান্ত্রিক খামারিদের নিয়ে ভাববেন বলেই আমার বিশ্বাস!!

লিখেছেনঃ Pavel Babu

আরো দেখুন

রিলেটেড আর্টিকেল

Leave a Reply

Back to top button