আগস্টসাধারণ আগস্ট

পুলিশ ভেবে মারধর, অতপর মৃত্যু

কোটা আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের খুনী মনে করে যাকে মেরে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল সে মূলত North East University থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করে একটা বায়িং হাউজে কর্মরত ছিল।

বিজ্ঞাপন
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যেমন অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্য করা হয়েছে ঠিক তেমনি আমার মামাতো ভাই Rabiul Limon হত্যা করা হয়েছে। উত্তরার হউজবিল্ডং এলাকাতে বিজয়ের ঠিক পর মুহূর্তে ৫ আগষ্ট ২০২৪ বিকাল ৫:৩০ এর দিকে, লিমনও তখন বের হয়েছিল অন্যদের সাথে বিজয় ভাগ করে নিতে, কিন্তু বের হয়ে তাকে জীবন দিয়ে বাসায় ফিরতে হলো। উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকাতে ঐসময় নাকি পুলিশ এলো-পাতারি গুলি করছিল, লিমন সেই সময় ভয়ে কোন এক স্থানে লুকাইছিল পরে ওখানথেকে বের হলে ছাত্র/জনতা তাকে পুলশ মনে করে পিটায় মারে, তাকে কোন কথা বলার সুযোগ ও দেয় না। এবং ৩-৪ ঘন্টা তাকে গাছের সাথে পা উল্টা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখে। লাশ চাইতে গেলেও প্রথমে আমাদের লাশ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে আমার মামা পৃথিবী ছেড়ে চলে যান আর এখন আমার মামাতো ভাই যার বউ কিনা চার মাসের অন্তঃসত্তা, আমারা এই শোক কিভাবে সইবো। এখন কিছু কিছু ফেসবুক গ্রুপে কেউ কেউ না জেনে লিমনের ছবি, ভিডিও পোষ্ট করছে শহীদ আবু সাইদের খুলি পুলিশ বলে। শহীদ আবু সাইদের পুলিশ বলে যে ভিডিওটা অনলাইয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সে আসলে আমা প্রিয় স্নেহের মামাতো ভাই লিমন।
শুরু থেকে আমার মামাতো ভাই Rabiul Limon এই ”বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন” এর সাথে সক্রিয় ছিল। এই আন্দলনে সক্রিয় হয়ে লিমন-ই আমাকে উৎসাহিত করেছে, লিমনের ফেসবুকের পোষ্টগুলো আমাকেও সাহস যুগিয়েছে। তার ফেসবুর প্রফাইলটা একটু গুরে দেখতে পারেন https://www.facebook.com/darkprince.limon
আমার মামাতো ভাই একজন বইপোকা মানুষ ছিল, আমার মামার এক মাত্র সন্তন লিমন, সকলের এতই প্রিয় কেউ কোনদিন তাকে ফুলের টোকা পর্যন্ত দেয় নাই। আমার মামা চেয়েছিল তাকে কোরানের হাফেস বানাবে কিন্তু হাফেজী সে সম্পন্ন করতে পারেন। সে এতটাই বইপ্রেমি মানুষ ছিল, সে যখন যখন হাফেজী পড়তো তখন একদিন তাকে কোথাও খুজে পাচ্ছিলাম না, আমার মামি আমাকে খুজতে পাঠালো সকালে বের হয়েছে তখন দুপুর গড়িয়ে বিকাল প্রায় আমি খুজতে বেরিয়ে কোথাও পেলামনা পরে লিমনের এক বন্ধু আমাকে বললো তাকে তো “বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রম্যমান লাইব্রেরির বাস” এ বসে বই পাড়তে দেখেছি। আমার মামা ফ্যামিলি নিয়ে খালিশপুরর গোয়ালপাড়া বিদুৎকেন্দ্রে আবাসিকে থাকতো, ততক্ষনে ভ্রম্যমান লাইব্রেরির বাস চলে গেছে খুলনা বি, এল কলেজের সামনে, আমি গিয়ে দেখি লিমন চিন্তামুক্ত বাসে বসে বই পড়ছে। আমি গিয়ে বললাম বাসায় চল মামি চিন্তা করছে, তখন সে বাইরে তাকিয়ে বলল আমি এখন কোথায়, আমি বললাম বি, এল কলেজের সামনে অডিওবুক এর একটা ইউটিউব চ্যানেলও সে খুলেছে, সে বই পড়ে অডিও রেকর্ড করে সেখানে আপলোড করে। https://www.youtube.com/@BanglaAudio-Book এইটা তার ইউটিউব চ্যানেল।
বর্তমানে লিমন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে একটা বায়িংহাউজে কর্মরত ছিল। সে একজন ছিল একজন সুদর্শন সুপুরুষ নম্র ভদ্র৤ কোনদিন করো সাথে জোরে কথা বলতে শুনি নাই, এবং কারো কোন ক্ষতি করে নাই। কিন্তু আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন কিনা এমন নির্মম মৃত্যু লিখল, মৃত্যু অবথারিত কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু মেনে নেওয়া যায়না। আমার মামি তার একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায়। তার এই নির্মম পরিনিতি আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
লিমনের ফেসবুকের সর্বশেষ পোষ্ট ছিল
“Abrar, Abu Sayed, Mugdho and the others are smiling from heaven.
Heroes never die.”
লিমন সকলের কাছে Hero হতে পারলো কিনা জানি না, তবে আমার/আমাদের Hero.
Rabiul Limon you will never die.
ভাই ওপারে ভাল থাকিস্‌, পরপারে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।
লিমনের জন্য সকলে দোয়া করবেন আল্লাহ্‌ যেন তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন৤ এবং তার পরিবারকে শোক শইবার ক্ষমতা দান করেন।
কিছু অতি উৎসাহি মানুষের ভুলের কারনে আমার তরুন ভাইটার অকোল মৃত্যু হল, যারা না জেনে এই কাজ করেছে আল্লাহ্‌ তুমি তাদের বিচার করো। দোয়া করি আর যেনে কোন মায়ের নিরাপরাধ সন্তানকে এইভাবে জীবন দিতে না হয়৤
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন – আমিন
যেহেতু আমার পরিবারের সবাই আমার এই পোষ্টটা দেখবে তাই আমি লিমনের মৃত্যু পরবর্তী ছবি দিতে পারছিনা।
ContextPlz এডিশন, ভিডিও এখানে।
হুবুহু তুকে ধরা হলো, মূল পোস্ট এখানে

আরো দেখুন

রিলেটেড আর্টিকেল

Leave a Reply

Back to top button