
আগস্টএক্সপোজ আগস্ট
মাত্র সাত দিনে ৩৯ লাখ টাকার প্রোপাগান্ডা
মেটা থেকে রিয়েলটাইম ডাটা পাওয়া না গেলেও এসব পেইজের এড লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখা যায় এখনো অসংখ্য এক্টিভ বিজ্ঞাপন ফেসবুকে চলছে।
মেটা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২৪ থেকে ৩০ জুলাই বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ থাকা স্বত্তেও বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে ৩৯ লাখ টাকার ওপর সরকারপন্থী বিজ্ঞাপন ফেসবুকে চলেছে।

ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের পূর্বের চিত্র-
জুলাই ১২ তারিখ থেকে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা শুরু হয় এবং ১৮ তারিখ রাত থেকে সারাদেশে ইন্টারনেট ব্ল্যাকওয়াউট শুরু হয়।
এর মধ্যে জুলাই ১৩–১৯ তারিখ এই সাত দিন মোট ১,৮৬০টি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন ৩৩৮টি ফেসবুক পেইজ থেকে প্রচার করা হয়। এর মধ্যে ১০০ ডলারের ওপর খরচ করে ১৬টি পেইজ, যার মোট পরিমাণ ৩,১২১ ডলার (প্রায় ৩.৬ লাখ টাকা সমমান)।

ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের পরবর্তী চিত্র-
ইন্টারনেট ব্ল্যাকওয়াউটের সময়ে জুলাই ১৯–২৩ তারিখের মধ্যে বিজ্ঞাপনে মোট ব্যয় দেখা যায় মাত্র ৪৮০ ডলারের এর মতো।
তবে ২৩ তারিখ রাতে ইন্টারনেট সেবা ফিরে আসার পর, জুলাই ২৪ থেকে শুরু হয় বিজ্ঞাপনের পিছনে অর্থের জোয়ার। ২৪–৩০ জুলাই এই সাত দিনে ফেসবুক বন্ধ থাকা স্বত্বেও রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে মোট ব্যয় করা হয়েছে অন্তত ৩৩,৯৯২ ডলার (প্রায় ৪০ লাখ টাকার সমমান)।
এসময়ের মধ্যে ২৭৫টি একটিভ বিজ্ঞাপনদাতাদের মধ্যে প্রায় ১৫০টিকে তাদের বিজ্ঞাপন ও পেইজের কনটেন্টের ওপর ভিত্তি করে সরকারপন্থী ও বিরোধীপন্থী লেবেলে আমরা শনাক্ত করি।
বিজ্ঞাপনগুলোর বিষয়বস্তু:
প্রচারিত বিজ্ঞাপনগুলোতে ৮০% এরও অধিক বিজ্ঞাপনদাতা সরকারপন্থী কন্টেন্ট শেয়ার করেছে। বিশেষত সরকারি প্রতিনিধিগণ মূলধারার গণমাধ্যমকে যা বলছে সেসবই এসব পোস্টে উঠে আসছে। তাদের প্রচারিত বিজ্ঞাপনের নমুনা বিষয়বস্তুগুলো হচ্ছে:
- সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞে বিরোধী দল কীভাবে মদদ দিয়েছে এবং অংশগ্রহণ করেছে।
- বিভিন্ন সরকারি ভবন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংসাবশেষের চিত্র
- আন্দোলনকারী ও তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক বিভিন্ন সহিংসতার বর্ণনা।
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ ও নৃশংসতার ঘটনাগুলো।
- আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান।
অপরদিকে সরকার বিরোধী বিজ্ঞাপনদাতারা সংখ্যায় প্রায় ২০% এর মতো হলেও তাদের বিজ্ঞাপন ব্যয় ছিল নাজুক। একমাত্র বিএনপির অফিশিয়াল পেইজ ছাড়া বাকি সব পেইজের বিজ্ঞাপন ব্যয় ছিল ১০০ ডলারের কম। বিএনপির অফিশিয়াল পেইজ থেকে এ মাসে ১২০ ডলারের একটি পেইজ ফলো করার বিজ্ঞাপন ছাড়া অন্য আর কোনো বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি।
পেইজগুলো কোথা থেকে চালানো হচ্ছে?
সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে এমন পেইজগুলোর এডমিনদের লোকেশন অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে সবগুলোরই অধিকাংশ এডমিন বাংলাদেশ ভিত্তিক। ধারনা করা যায় এসময়ে ফেসবুক বন্ধ থাকলেও তারা ভিপিএন এর মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে পারছেন।
তবে কোনো কোনো পেইজের একজন করে হলেও এডমিন বাইরের দেশ যেমন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। আশ্চর্যজনকভাবে বিরোধীপন্থী পেইজগুলোর কোনোটির ক্ষেত্রেই দেখা না গেলেও, সরকারপন্থী অন্তত ১২টি পেইজ পাওয়া গিয়েছে যার একজন এডমিন পাকিস্তানে রয়েছে।
দেশের সর্বোচ্চ টাকা ব্যয় করা রাজনৈতিক পেজ:
পেইজের নাম- ব্যয়ের পরিমাণ-এড সংখ্যা -কোন পক্ষ
১) Press Xpress -$ 27,039 -3,872 -সরকার
২)ভালোর পথে-Bhalor Pothe-$ 26,975 -2,065- সরকার
৩)Salman F Rahman-$ 26,863- 707 -সরকার
৪)Zunaid Ahmed Palak -$ 25,607-491-সরকার
৫)Rupganjer Kotha -$ 25,211-96 -সরকার
৬)CAP – Campaign Advocacy programme –
$ 12,879- 637 সরকার
৭)Bangladesh Nationalist Party-BNP- $ 12,361 -42 বিরোধী
৮)আহবান – Ahoban $ 12,205 -1,865 সরকার
৯) BD Peoples Voice $ 11,924 -427 সরকার
১০)BNP Media Cell $ 10,775 -106 বিরোধী
১১) M A Razzak Khan Raj CIP $ 10,707- 363 সরকার
১২ )সফল বাংলাদেশ $ 9,359 -3,241 -সরকার
১৩)আমার নেত্রী আমার অহংকার $ 9,077 2,800 সরকার
১৪) Bangladesh Awami League $ 9,061 -2,723 সরকার
১৫ )প্রজন্মের আওয়াজ $ 8,723 -1,668 সরকার
১৬ )Salma Islam – MP $ 8,543- 50- বিরোধী
১৭) Mahmud Hassan Ripon $ 7,697 -271 -সরকার
১৮ ) Positive Bangladesh $ 7,299 1,606 সরকার
১৯) বঙ্গবন্ধু অনলাইন আর্কাইভ $ 7,037 2,000 সরকার
২০)a2i – Aspire to Innovate $ 6,324- 112 সরকার
নিচে সরকারপন্থী ও বিরোধীপন্থী দুই গ্রুপে বিভক্ত করে এই পেইজগুলোর ব্যয়ের পরিমাণ তুলে ধরা হলো:
সরকারপন্থী (১৭) > ২৪৮,২৮৫ ডলার> ২.৯ কোটি টাকা
বিরোধীপন্থী (৩) >৩২,৭০২ ডলার> ৩৮ লাখ টাকা ১৯৮
কৃতজ্ঞতা: যাচাই