আগস্টভাইরাল আগস্ট

কোটা আন্দোলন চলাকালীন আলোচিত-সমালোচিত যত কথাবার্তা

কোটাপ্রথা নিয়ে টানা আন্দোলন শুরু হয় ৫ জুলাই। শুরুতে এই আন্দোলন অহিংস হলেও তা সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠে ১৫ জুলাই থেকে। প্রথমে আন্দোলন প্রতিহত করতে নামেন ছাত্রলীগ ও দলীয় সমর্থকেরা। পরবর্তীতে নামানো হয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে।

বিজ্ঞাপন

কোটা আন্দোলন চলাকালীন আলোচিত-সমালোচিত যত কথাবার্তা

শুরু থেকেই আলোচনায় বসলে এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হতো বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। অথচ সরাসরি আলোচনা না করে নীতিনির্ধারকদের নানা ধরনের মন্তব্যের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। বিভিন্নজনের করা মন্তব্য নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে প্রচুর। আবার কেউ কেউ আলোচনায় বসার কথাও বলেছিলেন। পুরো আন্দোলনের সময়ে নানাজনের মন্তব্য নিয়েই এই প্রতিবেদন।

নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে

১ জুলাই, সোমবার # ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে আইনিভাবে আমাদের দাবির চূড়ান্ত সুরাহা করতে হবে।’

৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার # ‘২০১৮ সালে গণ-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর নির্বাহী বিভাগ কোটা বাতিল করে যে পরিপত্র জারি করেছিল, আজকে বিচার বিভাগ দিয়ে সেই কোটাকে আবার পুনর্বহাল করা হলো। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা প্রহসন। রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে এই সমন্বয়হীনতা ও অন্তর্দ্বন্দ্বের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করুক এবং শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো পূরণ করুক।’

৮ জুলাই, সোমবার # ‘সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে শুধু সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে সংসদে আইন পাস করতে হবে। এটা করার দায়িত্ব কেবল নির্বাহী বিভাগ ও সরকারের। এখন আর আদালত দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।’

জি এম কাদের, বিরোধীদলীয় নেতা

৩ জুলাই, বুধবার # ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর নন, তাই সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা সংবিধানসম্মত নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে বড় আকারে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চিরস্থায়ী করলে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করা হয়।’

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান

৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার # ‘এত আন্দোলন কিসের রাস্তায় শুরু হয়েছে? আন্দোলনের চাপ দিয়ে কি হাইকোর্টের রায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?’

১০ জুলাই, বুধবার # ‘আমি প্রথম দিনই বলেছিলাম, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন হয় না। এটা আজকে না, আমি যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ছিলাম, তখন একটি মামলায় বলেছিলাম, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন করা যায় না। এটি সঠিক পদক্ষেপ না।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম, মহাসচিব, বিএনপি

৬ জুলাই, শনিবার # ‘বিএনপি তো একটি রাজনৈতিক দল। দেশের ভেতরে যা হচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়া তো বিএনপিকে দিতেই হবে। এটা ছাত্রদের আন্দোলন। এখানে বিএনপির সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই বলে ন্যায্য আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন করব না?’

১৭ জুলাই, বুধবার # ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিএনপি সরাসরি জড়িত নয়। তবে এ আন্দোলনে বিএনপির নৈতিক সমর্থন রয়েছে।’

২৩ জুলাই, মঙ্গলবার  #‘এমন নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমলেও হয়নি।’

ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

৮ জুলাই, সোমবার # ‘কোটা বাতিলের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন’

১৪ জুলাই, রোববার # ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘‘রাজাকার’’ স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে’

১৭ জুলাই, বুধবার # ‘আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান। আমাদের সারা দেশের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে আমাদের নেত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, সারা দেশে সতর্ক হয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে এ অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। কোনো অপশক্তির সঙ্গে আপস করা যাবে না।’

# ‘সরকার শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে। আদালতের কাছে সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ কোটার প্রস্তাব দেবে সরকার।’

২৬ জুলাই, শুক্রবার # ‘নিরীহ মানুষ হত্যার দায় বিএনপি ও জামায়াতের।’

২০ জুলাই, শনিবার # ‘এটা অবশ্যই কারফিউ। এটা নিয়ম অনুযায়ীই হবে এবং সেটা শুট অ্যাট সাইট হবে।’

২৮ জুলাই, রোববার # ‘শ্রীলঙ্কা স্টাইলে গণভবন দখলের ষড়যন্ত্র ছিল’

আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

১১ জুলাই, বৃহস্পতিবার # ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছেন। এটি অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণ বেআইনি।’

শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী

১৪ জুলাই, রোববার # ‘কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। মামলার পর আদালত যে রায় দেন, এতে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। আদালতেই সমাধান করতে হবে।’

১৪ জুলাই, রোববার  # ‘তারা তো আইন মানবে না, আদালত মানবে না, সংবিধান কি তারা চিনবে না বা একটা কাজ করতে হলে কার্যনির্বাহীর কাজ কী, বিধিমালা বা ধারা থাকে, একটা সরকার কীভাবে চলে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা এদের নাই।’

১৪ জুলাই, রোববার  #‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’

১৭ জুলাই, বুধবার # ‘আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।’

২৪ জুলাই, বুধবার # ‘কোটা আন্দোলনকারীদের একদিন জাতির কাছে জবাব দিতে হবে, কেন তারা তাদের দেশে এই ধ্বংসযজ্ঞের সুযোগ দিল।’

সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

১৫ জুলাই, সোমবার # ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাঁরা ‘‘আমি রাজাকার’’ স্লোগান দিচ্ছেন, তাঁদের শেষ দেখিয়ে ছাড়ব’

মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী

১৫ জুলাই, সোমবার #শান্তিপূর্ণভাবে কোটাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে অনেকেই পক্ষে–বিপক্ষে আলোচনা করেছে, আন্দোলন করেছে। এটি অবশ্যই নাগরিক অধিকার। এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে নিজের আত্মপরিচয়, জন্মপরিচয়, ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে ‘‘তুমি কে, আমি কে রাজাকার! রাজাকার!’’ স্লোগান দিয়েছে, এরা সবাই এই যুগের রাজাকার।

জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, প্রতিমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি

১৭ জুলাই, বুধবার # ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা হচ্ছে, তার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজব দায়ী। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, এক্সের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর অফিস ও ডেটা সেন্টার যদি ঢাকায় থাকত, তাহলে যেকোনো ধরনের কনটেন্ট ও গুজবকে প্রতিহত করা বা ফ্ল্যাগ দিয়ে দেওয়া অথবা ব্লক করে দেওয়া সহজ হতো।’

২১ জুলাই ‘মহাখালীতে দুর্বৃত্তদের আগুনে ডেটা সেন্টার পুড়ে গেছে। সেটা ঠিক করার কাজ চলছে। কবে নাগাদ ইন্টারনেট সেবা চালু হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।’

২৩ জুলাই, মঙ্গলবার # ‘ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের নিচতলার পুরোটা পুড়িয়ে দিয়েছে। তার পার্শ্ববর্তী আরেকটি ডেটা সেন্টার আংশিক পুড়িয়ে দিয়েছে এবং তিনটি ডেটা সেন্টারের ফাইবার অপটিক্যাল কেব্‌লের রিডানডেন্সিসহ পুড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আইএসপির ৭০ শতাংশ সার্ভার সেখানে ডাউন হয়ে গেছে। আমরা বেলা ৩টা থেকে ধাপে ধাপে এই পরিস্থিতির কারণে রাত ৯টায় ইন্টারনেট বন্ধ করিনি, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে।’

২৬ জুলাই, শুক্রবার # ‘সরকার দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করেনি, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে।’

আনিসুল হক, আইনমন্ত্রী

# ‘আমরা অবশ্যই (কোটা) সংস্কারের ব্যাপারে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করেছি। আমরা কোটা সংস্কারের পক্ষে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার আজই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসতে রাজি আছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের (শিক্ষার্থী) এ প্রস্তাবকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।’

সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক

# ‘এতগুলো লাশের ওপর দিয়ে আমরা আলোচনায় যাব কি না; গেলে কীভাবে যাব, কী নিয়ে যাব, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নিইনি। এগুলো নিয়ে আমরা কথা বলছি।’

সূত্রঃ প্রথম আলো

আরো দেখুন

রিলেটেড আর্টিকেল

Leave a Reply

Back to top button